Phutek Island Thiland Tour। ফুকেট-থাইল্যান্ড ভ্রমন



#PhutekIslandThiland

সাদা হাতির দেশ থাইল্যান্ডের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। কি নেই এই দেশে আধুনিক শহরের আলোর ঝলকানি থেকে শুরু করে পাহাড়ের ভাজে ছোট্ট গ্রাম আর বিশাল সমুদ্র।
আমি সলো এবং বাজেট ট্রাভেলার। আমি প্রাইভেট সার্ভিস হোল্ডার তাই সবার সাথে মিলিয়ে ছুটি ম্যানেজ করে ঘুরতে যাওয়া আমার জন্য কঠিন। একটা ট্যুরের প্ল্যান করলে অনেক ফ্রেন্ডস এসে বলবে আমিও যাবো, আমিও যাবো কিন্তু ফাইনালি আর কেও যেতে পারে না। আবার যাওয়ার পর কেও কেও বলবে, ভাই একবার বলতেন আমিও যাইতাম। এগুলা পোলাপানের জাতীয় সমস্যা। যে কারনে বরাবরের মতো একাই প্ল্যান করে ফেললাম থাইল্যান্ড ট্যুরের। কোথায় যাবো কি কি দেখব কি খাবো এসবের আগে দরকার ভিসা, ভিসা ছাড়া সব প্ল্যানই গুড়ে বালি। ১ম ধাপের ১ম কাজ ভিসার জন্য গেলাম এক ট্রাভেল এজেন্সির কাছে। আমি মূলত সব কিছু নিজের মত করতে ভালোবাসি। এসব ক্ষেত্রে গুগল আর ইউটিউব আমার অনেক ফেভারিট। প্রথম ধাপে খুজে একটা এজেন্সি বের করলাম আর তাদের দায়িত্ব দিলাম আমার ভিসা করিয়ে দেয়ার জন্য। আর তাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আমার প্রোফাইল এর প্রেক্ষিতে ভিসা পাওয়ার সম্ভবনা জানতে চাইলাম। ওনারা আশ্বাস দিলে ৯৯% তাই আর বিলম্ব না করে প্লেনের টিকেট কেটে ফেললাম থাই-লায়ন এর। ঢাকা-ডংমুয়াং-ফুকেট-ডংমুয়াং-ঢাকা মাত্র ১৮,২০০ টাকায়। এক্ষেত্রে আমি অন্য আরেকটা এজেন্সির সাহায্য নিয়েছিলাম।

সংখেপে ভিসা আবেদনের জন্য যা যা লাগবেঃ-
১। কমপক্ষে মাস মেয়াদী পাসপোর্ট এবং পাসপোর্টের ফটোকপি। ২। ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি।
৩। সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের পাসপোর্ট দুই কপি ছবি (35 x 45 mm) সাইজের।
৪। ব্যাংক সল্ভেন্সী সার্টিফিকেট।
৫। মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্টের কপি (ব্যাংকের সীল অফিসারের স্বাক্ষর সহ)
৬। চাকুরীজীবির ক্ষেত্রে NOC সার্টিফিকেট অফিসিয়াল ভিজিটিং কার্ড।
৭। ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে নোটারী করা ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি এবং অংশীদার হলে মেমোরেন্ডামের ফটোকপি।
**
থাই এম্বাসির ভিসা ফি ট্যাক্স সহ মোট ৩৪৫০ টাকা। তবে ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে করলে ৪০০০-৪৫০০ টাকার মত খরচ পরে।
উল্লেখ্য, ১ম বার থাইল্যান্ডে ভ্রমন/ভিসার জন্য এম্বাসি থেকে অবশ্যই ফোন দিয়ে কথা বলবে। সুতরাং ফোন রিসিভ না করলে ভিসা পাওয়ার আশা ওখানেই শেষ। আমার ক্ষেত্রে আগে আমার অফিসে ফোন দিয়েছে তার কিছুক্ষণ পরই আমার মোবাইল ফোনে কল দিয়েছে। ভয় নেই তারা থাই ভাষায় কথা বলবে না, বাংলায়ই কথা বলবে। সাধারণ সব কথা, কেন থাইল্যান্ডে যাবেন? আপনি কি করেন? আপনার অফিস/ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম? এর পূর্বে কোন দেশে গিয়েছেন কি না? আপানার ব্যাংক ব্যালেন্স কত? ইত্যাদি- ফটাফট সুন্দর করে উত্তর দিন। মেয়ে কলার কথা বলবে। বিধায় বারতি কথা বলবেন না। যা প্রশ্ন করবে ঠিক তারই উত্তর দিন। সব ঠিক থাকলে ভিসা নিশ্চিত পেয়ে যাবেন। আর ফোন করে সাধারণত সকাল ১০ টা হতে দুপুর টার মধ্যে। আর একখান কথা ব্যাংকে ৬০০০০/- টাকা থাকলে পেপারস জমা করা যায়। তবে একেবারে মার্জিনে টাকা না রেখে ৭০০০০- ৮০০০০ হাজার টাকা রাখলে ভালো হয়। যা হোক ভিসা হয়ে গেল প্লেনের টিকিট তো আগেই করা ছিল। এবার খাতা কলম নিয়ে গুগল মামার সাহায্যে দিনের একটা প্ল্যান করলাম। যথারীতি যাওয়ার দিন। আর হ্যাঁ ইন্টারন্যাশনাল ফ্ল্যাইটের জন্য অবশ্যই .-.০০ ঘন্টা আগে এয়ারপোর্টে যেতে হয়। আজকাল এটা অনেকেই জানে। তবে অল্প কিছু সময় এদিক সেদিক হতে পারে। বোর্ডিং পাস করার সময় বললাম, জানালার পাশে সিট দিতে। এযাবৎ কোন সুন্দরী কথা না রাখলেও ইনি কথা রাখলেন। ইমিগ্রেশন শেষ করে ফ্লাইটের জন্য ওয়েট করলাম। সাথে কিছু সেলফিও তুললাম। ফেসবুক তো গরম রাখতে হবে! যথা সময়ে প্লেনে উঠে বসলাম। থাই-লায়ন মূলত বাংলাদেশে নতুন চালু করেছে। এদের ফ্লাইট রাতে .৩০ ছাড়ে। এই ফ্লাইটের একটা সুবিধা ডোমেস্টিকের জন্য এয়ারপোর্ট পরিবর্তন করা লাগে না। .১৫ ঘন্টায় পৌঁছে গেলাম ব্যাংককের ডং-মুয়াং এয়ারপোর্টে। এয়ারপোর্টে নেমেই মনটা জুড়িয়ে গেলো। বিশাল এয়ারপোর্ট খুব সুসজ্জিত এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। ল্যান্ডিং থেকে ইমিগ্রেশন অনেক দূরে। গ্রাউন্ড লিফট দিয়ে চলে গেলাম ইমিগ্রেশনে। প্লেনেই ফরম দিয়েছিল পূরণ করে রেখেছিলাম বলে সোজা ইমিগ্রেশনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ফরমে অবশ্যই হোটেলের নাম এবং ঠিকানা লিখবেন নইলে নানান ঝামেলায় পরতে হতে পারে। আমি যেভাবে ট্যুর করেছিলাম তার সংক্ষিপ্ত প্ল্যান খরচ শেয়ার করলাম ।

১ম দিনঃ
ব্যাংকক-ফুকেট (এয়ারপোর্ট থেকে নেমে ২৫০/- থাই দিয়ে শেয়ারে পাতং বিচ এরিয়াতে বুকিং ডট কমে কাটা হোটেলে চেক-ইন দিলাম। অবশ্য ব্যাংকক থেকে আপনি বাস কিংবা ট্রেনেও যেতে পারেন। ১২-১৪ ঘন্টা লাগে। আমি যেহেতু এই পন্থা অবলম্বন করি নাই তাই বিস্তারিত জানি না) আসার পথে ওরা একটা ব্রেক দেয়। সেখানে অনেক ট্যুর প্যাকেজ কোম্পানি আপনাকে বিভিন্ন দ্বীপে ভ্রমনের প্যাকেজ দেখাবে। আমি সেখান থেকে একটা প্যাকেজ নিয়ে ফেলি। চিন্তা করলাম ফুকেটে হোটেলে চেক-ইন দিয়ে এই প্যারা নিতে চাই না। যাই হোক মোটামুটি কমের মধ্যেই একটা নিয়ে ফেলি মাত্র ১২০০ থাই। অইদিন তেমন কিছু করি নাই একটু রিল্যাক্স কাটিয়েছি। পাতং বিচে গিয়েছিলাম। হাল্কা পাতলা রোমিং করে, ডিনার করে হোটেলে এসে ঘুম।

২য় দিনঃ
খুব সকালে প্যাকেজের গাড়ি এসে আমাদের যেটিতে নিয়ে গেছে, সেখানে হাল্কা পাতলা স্ন্যাক্স ফ্রি খাওয়ায়। খুব সুন্দর করে সহজ ইংলিশে আপনাকে নিয়ম কানুন বুঝাই দিবে। তারপর বোর্ডিং করাবে আনুমানিক .৩০ এর দিকে। আমি মূলত জেমস বন্ড সহ মায়া-বে, খাই আইল্যান্ডের টিকেট কেটেছিলাম সাথে দুপুরের খাবার ইনক্লুড থাকে। এখানে বেশ কয়েকটা ওয়াটার এক্টিভিটিজ আছে। ফ্রি স্নোর্ক্লিং ছিলো। আমি ট্রাই করেছিলাম একটু করে। দিন-দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেছিলো। যাই হোক, আন্দামান সাগরের এই জায়গাই সমুদ্র থেকে মাথা তুলেছে অনেক চুনাপাথরের পাহাড়। যেমন বৈচিত্রময় সেসব পাহাড়ের গড়ন তেমনই। হলিউডের সিনোমার শুটিং-এর দৌলতে একটি দ্বীপের নাম হয়ে গিয়েছে জেমস বন্ড আইল্যান্ড। ফিরতে ফিরতে বিকাল হয়ে গিয়েছিলো। গা গোসল দিয়ে হাল্কা রেস্ট নিয়ে রাতের ফুকেট উপভোগের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যাই। আসার পথে ১৫০০ থাইয়ে ফিফি আইল্যান্ডের একটা ট্যুর প্যাকেজ কিনে ফেলি বুফে লাঞ্চ/ স্ন্যাক্স ইত্যাদির সুবিধা সহ।

৩য় দিনঃ
হোটেল-ফি ফি আইল্যান্ড-হোটেল। আন্দামান সাগরের মধ্যে ফিফি ডন আর ফিফি লে এই দুটি দ্বীপ নিয়ে ফিফি আইল্যান্ড সবুজ রঙের সমুদ্রর মাঝে পাহাড় জঙ্গল ভরা ছোট ছোট নির্জন দ্বীপ তার বেলাভুমি। আর মাথার ওপার ঝকঝকে নীল আকাশ আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে তোলে। ফিফি ডনে আছে হোটেল রিসর্ট বাজার রেস্তোরাঁ জনবতি সব ফিফি লে কিন্তু জনবসতিবিহীন আরও খাড়া কিছু উঁচু-নিচু পাহাড়ের সমষ্টি। তার আনাচে কানাচে লুকিয়ে আছে কয়েকটা ছোট-বড় অপূর্ব সমুদ্র সৈকত কিছু গা ছমছমে গুহা ইত্যাদি করার সুবিধা। যদিও একদিনের প্যাকেজ ট্যুর ঘুরে নেওয়া যায় তবু ফিফি আইল্যান্ডের প্রকৃতিকে বুঝতে হলে অন্তত এক-দু রাত ফিফি ডন- কাটাতে হবে সেভাবেই ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া উচিত। যাই হোক আমার টাইম নাই। কিন্তু মনে মনে প্ল্যান করে আসি, নেক্সট টাইম ফিফি থাকবো। অইদিন ফিরে সেই আগের মতই। পরেরদিন ফ্লাইট ব্যাংকক এর উদ্দেশ্যে।

৪র্থ দিনঃ
সকালের ফ্লাইটে ব্যাংকক ডং-মুয়াং, সেখান থেকে খাও-সান এলাকা কাছেই একটা হোম স্টে তে উঠি। পাশেই একটা মুসলিম রেস্তোরা পেলাম। অনেকদিন পর ভাত খেলাম। আহা কি যে ভালো লাগলো। তারপর একটু সাইট সিন করলাম। মার্কেট এরিয়াতে গেলাম। মাই গুডনেস এত সুন্দর আর পরিপাটি হাটি আর ভাবি আমরা কই আছি। শপিং করার জন্য অনেক দামী-কমদামী মার্কেট আছে। এরমধ্যে ইন্দরা, এমবিকে,সিয়াম সেন্টার, প্লাতুনাম, প্লাতুনাম হোল-সেল ইত্যাদিতে জিনিসপত্রের দাম একটু কম। ইচ্ছা মত শপিং করা যেতে পারে। আমি জাস্ট একটা ব্যাগপ্যাক নিয়ে গিয়েছিলাম, তাই একটা লাগেজ কিনেছিলাম মাত্র ৯৯০ থাই দিয়ে। ওটা ভর্তি করে যা পেরেছি ফ্যামিলির জন্য নিয়েছিলাম। এখানেও রাতে হ্যাপেনিং এর জায়গা আছে। একটু লেট নাইট ডাইভ দিলাম।রাতের ব্যাংকক শহর উপভোগ করতে চাইলে, চায়না রোড, বাংলা রোড, খাও-সান রোড বিখ্যাত। এছাড়াও শহরের আসে পাশে ঘুরার জায়গা কি কি আছে খবর নিলাম। ফুটপাতে নানারকম মিষ্টি আম, কাঁঠাল, তরমুজ, পেপে মিষ্টি তেতুল পাওয়া যায়। যা খেতে সুস্বাদু। তবে ব্যাংকক দীর্ঘদিনের পুরনো শহর হওয়ায় প্রায় সারাদিনই যানজট লেগেই থাকে। তাই কোথাও যেতে চাইলে একটু আগেই বের হওয়া ভালো

৫ম দিনঃ
মুলতঃ ওইদিন রাত ১১.৫৫ আমার ফ্লাইট ছিলো। তাই দিনের বেলাটা কাজে লাগানোর ট্রাই করলাম। গিয়েছিলাম সাফারী পার্কে। প্যাকেজের মূল্য ছিলো ৭৫০ থাই। থাইল্যান্ড সাফারী পার্ক যে কোন বয়সের মানুষকে আর্কষণ করবে। অর্থাৎ ছোট-বড় সবার ভাল লাগবে এই সাফারী পার্কে ঘুরে। এখানে এতো সুন্দরভাবে সব পশু-পাখি রাখা আছে যাহা দেখলে আপনার মন ভরে যাবে। আপনার যত টাকাই খরচ হোক না কেনো, আপনার মনে হবে, সব টাকা উশুল হয়ে গেছে। আর সাফারী পার্কে একটু পর পর ঘুরাঘুরির ফাঁকে পশু-পাখিদের বিভিন্ন গেম শো বিশেষ করে শিশুদের মাতিয়ে তুলবে। ছাড়া ব্যাংককে আরো অনেক ঘুরার স্পট আছে। যেমন- স্কাইট্রেনে চড়া সন্ধায় ব্যাংকক নদীতে রাজকীয় রিভার ক্রুজ ভ্রমণ ইত্যাদি। ব্যাংককের একটি প্রধান আকর্ষণ হল ফ্লোটিং মার্কেট বা ভাসমান বাজার। এখানে নৌকায় চড়ে পন্য সামগ্রী বিক্রি করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমি যেতে পারি নাই। খুব ইচ্ছা ছিলো। এছাড়া মাদাম ত্যুসো মিউজিয়ামে যেতে চেয়েছিলাম। শুনেছিলাম এন্ট্রি ৪০০ থাই। কিন্তু গিয়ে দেখি দাম বারাই ফেলছে। ১৪৯৯ থাই করে ফেলেছে। বাইরে যতটুকু আছে দেখে চলে এসেছি। এরপর সন্ধ্যার দিকে গাট্টি বস্তা গোল করে এয়ারপোর্ট ডং-মুয়াং ফ্লাইটের . ঘন্টা পুর্বে, আগেই শুনেছিলাম সন্ধ্যায় অনেক ট্রাফিক থাকে। তাই পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বার হওয়া ভালো তারপর ঢাকা।

খরচের একটা সামারি দিচ্ছি-
এয়ারঃ ১৮,২০০ টাকা হোটেল
ফুকেটঃ ,৫০০ টাকা ( দিন) 
হোটেল ব্যাংককঃ ,২০০ টাকা (. দিন)
খাওয়া-দাওয়াঃ ,৫০০ টাকা (আনুমানিক)
ট্রান্সপোর্টঃ ,০০০ টাকা (আনুমানিক)
আইল্যান্ডঃ ১০,০০০ টাকা (আনুমানিক)

বি.দ্র: যে কোন পর্যটন স্থান ওই দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দিন শেষে দেশ নিয়ে যদি কেও কটূক্তি করলে আমাদের খারাপই লাগবে। তাই দেশের মান-সম্মান নষ্ট হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন। ঘুরতে যেয়ে যতটুকু সম্ভব সময় কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। ব্যাংককে জ্যাম আছে বিষয়টা মাথায় রেখে ঘোরা ফেরা করুন। যে দেশে যাবেন ওই দেশের নিয়ম-কানুন আইন মেনে চলুন। আর পরিষ্কার পরিছন্নতা বজায় রেখে ভ্রমন করুণ।
 

Comments