Marayen Tong, Alikadam, Bandarban Tour । মারায়তং, আলী কদম, বান্দরবান ভ্রমন



#MarayenTong #Bandarban
রাতে ক্যাম্প করার জন্য যে মারায়তং আদর্শ জায়গা গুলোর একটি এটা কম বেশি সবাই অলরেডি জেনে গেছেন।আমার পোষ্টটা মারায়তং পাহাড় নিয়ে হলেও রাতে ক্যাম্পিং নিয়ে নয়,বরং যারা ব্যস্ততা বা ছুটি ম্যানেজ করার ঝামেলা বা অন্য কোনো কারনে রাতে ক্যাম্পিং করতে পারছেন না,দিনে দিনে ঘুরে আসতে চাচ্ছেন,কিন্তু কিভাবে যাবেন, কিভাবে কি করবেন কিছুই জানেন না,পোষ্টটা তাদের জন্য কাজে দিবে।আপনাদের সুবিধার্থে আমাদের ট্যুরের আদ্যোপান্ত আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম 
আমি আর আমার কলিগ দুইজনেই ভ্রমণপাগল মানুষ।প্রতিমাসে কমপক্ষে একটা ট্যুর দেওয়ার চেষ্টা করি দুজন মিলে।ছুটি না নিয়ে অফডেতেই বেশিভাগ আমরা গিয়ে থাকি।তো এবার ডিসিশন নিলাম মারায়তং যাবো,কিন্তু রাতে ক্যাম্প করে থাকার মতো সময় আমাদের কাছে নাই।যেভাবেই হোক দিনে দিনে আসতে হবে আমাদের।কিন্তু সকালে চিটাগাং থেকে রওনা দিয়ে রাতের মধ্যে আসতে গেলে একটু টাইট শিডিউল হয়ে যাবে।তাই সিদ্ধান্ত হলো আগের দিন ডিউটি শেষ করে রাতেই চকরিয়া চলে যাবো,তাহলে পরের দিন জীপে করে ফাস্টট্রিপেই চলে যাওয়া যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ,বৃহস্পতিবার ডিউটি শেষ করে রাত সাড়ে ৯টা বাজে মুরাদপুরের মক্কা হোটেল থেকে খেয়ে রওনা দিলাম নতুন ব্রিজের উদ্দেশ্যে।সেখান থেকে ইউনিক বাসে দরদাম করে ১৫০ টাকা করে দুইটি টিকেট নিলাম চকরিয়ার।১০টার পর করে বাস রওনা দিলো চকরিয়ার উদ্দেশ্যে।প্রায় সাড়ে ১২টায় আমরা চকরিয়া গিয়ে পৌছলাম।যেহেতু রাতে আমাদের হোটেলে থাকতে হবে তাই হোটেল খুঁজা শুরু করলাম।চকরিয়া বাজার এরিয়াতেই অনেক হোটেল আছে,আমরা হোটেল গার্ডেন আবাসিকে ছিলাম,নন-এসি ডবল বেডের রুমের জন্য আমাদের ৬০০টাকা দিতে হয়েছিলো।হোটেলের ম্যানেজার থেকে জেনে নিলাম আলিকদমের গাড়ি ছাড়ার সময়সূচী।
পরের দিন সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে হোটেল চেক আউট করে চলে গেলাম চকরিয়া বাস স্ট্যান্ডে।সেখানে গিয়ে সকালের নাস্তা করে নিলাম।যেহেতু আমরা জীপে করে আলিকদম যাবো তাই আলিকদমের জীপের টিকেট কেটে নিলাম।গাড়ির প্রথম যাত্রী হওয়াতে সামনের দুইটা সীট আমাদের দিলো।গাড়ি ১৪জন না হলে ছাড়বেনা,তাই অপেক্ষা করতে লাগলাম।হঠাৎ দেখলাম বড় একটা গ্রুপ আসলো,তারাও আলিকদম যাবে,তাদের টীমে ৯জন ছিলো।ঢাকা থেকে কক্সবাজার ঘুরে আলিকদম যাবে তারা।কোথায় যাবে জিজ্ঞেস করতেই তাড়াও জানালো আমাদের মতো মারায়তং যাবে।যাক একসাথে যাওয়া যাবে তাহলে সবার। বাকি তিনজন যাত্রী হওয়ার পরে গাড়ি আলিকদমের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো,আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে আমরা যেতে থাকলাম আলিকদমের উদ্দেশ্যে।সামনের সীটে বসার কারনে ড্রাইভারের সাথে ভালোই ভাব জমে গেছে ততক্ষণে,উনাকে জানালাম আমাদের আবাসিক নামক জায়গায় নামিয়ে দেওয়ার জন্য।প্রায় ১ঘন্টা পর উনি আমাদের আবাসিকে নামিয়ে দিলো,আবাসিক নেমে যে যার মতো নাস্তা করে নিলাম।সাথে পানির বোতল শুকনা খাবার নিয়ে ১১জনের টীম রওনা দিলাম মারায়তং পাহাড়ের উদ্দেশ্যে।পাহাড়ি মেঠো পথ পাড়ি দিয়ে একসময় পাহাড়ি রাস্তার সম্মুখীন হলাম,এই রাস্তা যে কাউকে চেলেঞ্জ ছুড়ে দিতে সক্ষম। ২মিনিট হাটলেই আর পা চলেনা, ২মিনিট হেটে হেটে ৪মিনিট রেস্ট নিতে হচ্ছিলো সবার।
পাহাড়ের অর্ধেক উঠতে উঠতেই মোটামুটি বোতলের পানি সবার শেষের পথে।চলতে চলতে ঢাকার ৯জনের সাথে যে আমরা কখন এতো মিশে গেলাম টেরই পেলাম নাহ,মনে হচ্ছি আমরা ১১জনই 
ভয়ংকর সুন্দর রাস্তা যেনো শেষই হচ্ছেনা, এক মোটা ভাই উঠতে না পেরেতো শেষ পর্যন্ত ব্যাকই করলো।
প্রায় ২ঘন্টা ১৫মিনিট পর আমরা পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে সক্ষম হলাম।উপরে উঠে এতোক্ষনের এতো ক্লান্তি আমরা নিমিষেই ভুলে গেলাম। জেনো স্বপ্নের রাজ্য,হাত বাড়ালেই আকাশ ছোঁয়া যাবে।
দুই-আড়াই ঘন্টা উপরে থেকে সাড়ে ৩টার দিকে আবার রওনা দিলাম নামার জন্য।মোটামুটি এক ঘন্টা পর আমরা আবাসিক বাজারে এসে পৌছলাম।বাজারের পাশেই বড় এক পুকুর আছে,সেখানে সবাই গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।তারপর দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা দুইজন এবং ঢাকার সেই গ্রুপের একজন মোট ৩জন মিলে চলে গেলাম আদিকলম বাজারে,সেখান থেকে জীপের টিকেট কেটে আবাসিক থেকে বাকি সদস্যদের সাথে নিয়ে চলে আসলাম চকরিয়া।চকরিয়ায় এসে ১৮০টাকা করে সৌদিয়া বাসে টিকেট কেটে রাত ৯টায় পৌছে গেলাম চট্টগ্রাম(দামপাড়া)
পরিশেষে ঢাকার গ্রুপটার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ,তারা না থাকলে হয়তো আমাদের ট্যুরটা এতো সুন্দর হতোনা।
আপনাদের সুবিধার্থে নিচে যাওয়া আসার বিস্তারিত তুলে ধরলাম।
যদি চট্টগ্রাম থেকে যেতে চান:
রুট:চট্টগ্রাম-চকরিয়া-আলিকদম-মারায়তং
চট্টগ্রাম থেকে যেতে চাইলে দুই উপায়ে যেতে পারবেন,আপনি চাইলে রাতে অফিস করে বা আপনার কাজকর্ম সেরে রাতেই চলে যেতে পারেন,অথবা সকাল ভোরে যেতে পারেন।
যেখান থেকে গাড়িতে উঠবেন: দামপাড়া কাউন্টার,বহদ্দারহাট টার্মিনাল,চান্দগাও থানার সামনে থেকে অথবা নতুন ব্রীজ থেকে।
চট্টগ্রাম থেকে চকরিয়া:
রাতে গেলে চকরিয়া বাজারে নামবেন,কারন যেহেতু আপনাকে হোটেলে থাকতে হবে, হোটেল গুলো সব এদিকেই প্রায়।আর সকালে গেলে সরাসরি চকরিয়া বাসস্ট্যান্ডে নামলে হবে।বাজার থেকে বাসস্ট্যান্ড ৫মিনিটের হাটার দূরত্ব।যদি রাতে থাকেন সেক্ষেত্রে দুই জনের জন্য একরুমের হোটেল ভাড়া ৫০০-৬০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে।
ভাড়া:
গাড়িভাড়া গাড়িভেদে ১৫০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা যাবে। এস.আলম(অর্জিনাল) অথবা মার্শা পরিবহনে গেলে ১৮০টাকা করে রাখবে,তবে এদের সার্ভিস অনেক ভালো।তাছাড়া ২নাম্বার ইউনিক অথবা হানিফে গেলে দামদর করে ১৫০টাকায় যেতে পারবেন।
হোটেল:
গার্ডেন আবাসিক। চকরিয়া শপিং কমপ্লেক্সের ৩য় তলা, ইসলামী ব্যাংকের উপরে।
মোবাইল:০১৮৮২৯১১৭৭৫
চকরিয়া থেকে আলিকদম:
চকরিয়া থেকে লোকাল বাস অথবা চাঁদের গাড়ি(জিপগাড়ি)-তে করে আলিকদম যাওয়া যায়।তবে চাঁদের গাড়িতে করে যাওয়াটাই মজার,তাছাড়া চাঁদের গাড়ি লোকাল যাত্রি নেয়না,তাই তাড়াতাড়ি পৌছা যায়।চকরিয়া বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে আলিকদমের জীপ গাড়ি কোন জায়গা থেকে ছাড়ে কাউকে জিজ্ঞেস করলে যে কেউ দেখিয়ে দিবে।ওখানে গিয়ে টিকেট কাটতে হবে।এক গাড়িতে টোটাল ১৪জন বসা যায়।একটি গাড়ির সব টিকেট বিক্রি হলেই গাড়ি ছেড়ে যাবে।সকালে ফাস্টট্রিপ ৮টার দিকে ছেড়ে যাবে।
ভাড়া:
ভাড়া ফিক্সড ৭০টাকা করে নিবে জনপ্রতি,তবে সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসলে ৭৫টাকা করে দিতে হবে।আর যদি গাড়ি রিজার্ভ নেন সেক্ষেত্রে ফিক্সড ১০০০টাকা নিবে।
যেখানে নামতে হবে:
মারায়তং যাওয়ার জন্য আপনাকে আবাসিক নামের জায়গায় নামতে হবে,এটি আলিকদম থেকে কিছুটা আগে,ড্রাইভারকে আগে থেকে বলে রাখলে নামিয়ে দিবে।আলিকদম থেকে আবাসিকে পৌছতে ১ঘন্টা ১০মিনিটের মতো সময় লাগবে।
মারায়তং যাত্রা:
আবাসিক নেমে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই মারায়তং যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দিবে।সোজা ইট সোলিং রাস্তায় হাটতে থাকবেন।দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগবে মারায়তং এর চূড়ায় পৌছতে।নামার সময় এক ঘন্টার মধ্যে আবার চলে আসতে পারবেন।অনেক খাড়া টিলা হওয়ায় অল্প কিছুক্ষণ উঠে উঠে অবশ্যই রেস্ট করে নিবেন।একজনের জন্য কমপক্ষে ২লিটার পানি সাথে নিবেন।উপর গিয়ে খাওয়ার জন্য অবশ্যই কলা,শুকনা খাবার সাথে করে নিয়ে উঠবেন।অনেক বেশি খাড়া টিলা হওয়ায় সাথে যথাসম্ভব কম জিনিস বহন করার চেষ্টা করবেন।উপরে দোকান বা পানির কোনো ব্যবস্থা নাই,তাই প্রয়োজনীয় জিনিস নিচ থেকেই নিয়ে যাবেন।
ফিরার পথে:
মারায়তং থেকে আবাসিকে এসে খাওয়ার জন্য কিছু ছোট হোটেল পাবেন, ওখানে দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারেন।
চকরিয়া আসার জন্য আলিকদম বাজারে যেতে হবে,আবাসিক থেকে আলিকদম বাজারে আসার ব্যাটারিচালিত গাড়ি(টমটম)পাবেন।সেগুলাতে করে আলিকদম চলে আসবেন,জনপ্রতি ভাড়া নিবে ২০টাকা করে।
আলিকদম থেকে আগের মতোই চাঁদের গাড়ির টিকেট কেটে চলে আসুন চকরিয়া বাসস্ট্যান্ডে।বাসস্ট্যান্ডে মার্সা এবং এস.আলমের টিকেট কাউন্টার পাবেন।১৮০টা ভাড়ায় চিটাগাং চলে আসতে পারবেন।
তাছাড়া চাইলে হানিফ,ইউনিকেও আসতে পারবেন
ঢাকা থেকে যারা আসবেন:
ঢাকা থেকে আলিকদমের সরাসরি গাড়ি আছে,ভাড়া পড়বে ৮৫০টাকা করে।
বি.দ্র: কোনো ক্রমেই পাহাড়ে পানির বোতল, অপচনশীল বস্তু ফেলে আসবেন না। আমরাই ঘুরতে যাবো,তাই পরিষ্কার রাখার দায়িত্বও আমাদের। আমরা ১১জন কোনো ময়লা ফেলে আসিনি,আপনারাও ফেলবেন না প্লিজ।

Comments