ঘটনা ১---
অফিস থেকে ২ দিনের ছুটিটা অনেক কষ্টে
ম্যানেজ করে রওনা করেছিলাম সিলেটের উদ্দেশ্যে। মেট্রোরেলের উন্নয়ন এর স্বার্থে ২
ঘন্টা বিরতিহীন জ্যাম ও হাসিমুখে মেনে নিয়ে যখন সায়দাবাদ পৌছুলাম, তখন রাত ১০ টা। কিন্তু
বিধিবাম!
কয়েকদিনের বিরতিহীন বৃষ্টিতে নাকি
বন্যার দেখা মিলেছে টাংগুয়ার হাওড়ে। এমন খবর ও ভেসে এল যে, স্থানীয় প্রশাসন
ট্যুরিস্ট এর ভ্রমনেও নাকি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
আমার বেসরকারি অফিসের ছুটির ডেডলাইন
যেন কোনভাবেই মিস না হয়, তাই সিদ্ধান্ত হল, সিলেট বাদ। যাব সীতাকুন্ডে।
কড়কড়ে বেশ কিছু টিকিটের টাকা গচ্চা
দিয়ে রাত ১২ টায় রওনা হলাম সীতাকুন্ডের দিকে।
ঘটনা ২---
সকাল ৫ টা।
কক্সবাজারে রোহিংগা ক্যাম্পে ব্র্যাক এ চাকরিরত বন্ধুটির মীরসরাই আসতে আরো ঘন্টা
দুয়েক লাগবে। স্থানীয়দের বদৌলতে জানতে পারলাম কাছেই নাকি বেশ কয়েকটি ঝর্না দেখার
আছে। আমরা তাই চা পর্ব শেষ করেই চড়ে বসলাম সিএনজি তে। ১৫ টাকা ভাড়ার দূরত্বে যখন
আমাদের নামিয়ে দিল, তখন ঘুনাক্ষরেও ভাবিনি ঐ দিন থেকে বেচে তাহার ইচ্ছেটাই বেড়ে
যাবে।
ঘটনা ৩---
বোয়ালিয়া ঝর্নায় পৌঁছাতে আধ ঘন্টা মত
লাগল। প্রচন্ড আওয়াজ করে প্রবল বেগে স্বচ্ছ পানির স্রোতের নিচে পড়া দেখে আবারো
প্রেমে পড়লাম যেমনটা পড়েছিলাম আমিয়াখুম দেখে। অনেক্ষন ভিজলাম, শিশুর মত দাপাদাপি
করলাম, কানে পানি গেল, চোখ লাল হল এরপর উঠলাম। ছুটিতে এসেছি। তাও স্কুল বন্ধুদের
সাথে। ঐদিন আমি শিশু। এই ধরুন ৪-৫ বছরের?
ঘটনা ৪---
তাজ এল বেশ দেরীতে। ততক্ষনে আমাদের
সংগী হয়েছে ঝর্না দেখতে আসা আরো একটা গ্রুপ। ওদের বন্ধুই ওদের গাইড যে এখানে আগেও
পদচিহ্ন ফেলেছে কয়েকবার। শোনা গেল ঘন্টা দুয়েকের ট্রেকিং এ নাকি আরো ঝর্না দেখার
আছে। অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত এখনো। রওনা হলাম ওদিকে।
ঝিরিপথ ধরে হাটা শুরু হল আমাদের। কোথাও
গোড়ালীও পানিতে ডোবে না, তো কোথাও কোমর ও ডুবে যায়। ঠিক যেন ষোড়শ প্রেমিকার মত।
আনপ্রেডিক্টেবল!
ঘটনা ৫---
জুতোর মধ্যে গুড়ি পাথর ঢুকে যাওটা আমার
বেজায় বিরক্ত লাগে। ঐ বিরক্তি কাটাতেই যেন দেখা দিতে লাগল একের পর এক ঝর্না।
সীতাকুন্ড যে এত গভীর অভিমানি, তা ছোট্ট যায়গায় এতগুলো ঝর্না না দেখলে বুঝতামই না।
একে একে দেখলাম অমরমানিক্যা, বাউশা,
আন্দারমানিক আরো কত নাম না জানা ছোট ছোট ঝর্না। তবে এক দান করে ভিজতে ভুলিনি কোন
ঝর্না তেই।
ঘটনা ৬---
দিনের শুরু থেকেই আকাশ ছিল মেঘলা।
আন্দারমানিক থেকে ফেরার পথে একেবারে অঝোরে বৃষ্টি শুরু হল। শান্ত ঝিরি কেন জানি
হঠাত করেই ক্ষেপে উঠল। কিছু সময় না দিয়েই পানির উচ্চতা হু হু করে বাড়তে লাগল।
পরিষ্কার পানিকে মুহূর্তেই গ্রাস করল
ঘোলা কাদা পানি। কেমন জানি আতংক ঘিরে ধরল সবাইকে। ঠিক তখন ই দেখা হল তাদের সাথে
যারা না থাকলে আজ হয়ত এটা লেখার সাহস কিংবা ক্ষমতা কোন্টাই হত না আমার।
Leo Nur Khan ভাইরা এলেন
তাদের গ্রুপ কে সাথে নিয়ে। পানির উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বৃষ্টির ক্রমাগত বেড়ে চলাকে
তারা কোনভাবেই ভালমত নিলেন না। এক্ষুনি ফিরে না গেলে বড় বিপদ হতে পারে।
পানি ততক্ষনে কোমর ছুয়েছে। বিয়ার
গ্রিলস কোন এক প্রোগ্রামে বলেছিলেন ফ্ল্যাশ ফ্লাডের কথা। আপাতত তখন মাথায় বেচে
থাকার কথাই আসছিল। নিজেদের অজান্তেই সারভাইভাল সিচুয়েশনে পড়েছি। সোজা বাংলায়,
ঘোরতর বিপদ।
ঘটনা ৭---
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে আমরা ১
টি ঘন্টা পার করেছি। পুরোপুরি বিদ্ধস্ত হবার আগেই এখান থেকে বের হওয়া লাগবে।
বৃষ্টি টাও সেদিন নাছোড়বান্দা। সেই যে এল, যাবার নাম ই নেই বরং বেড়েছে ক্ষনে
ক্ষনে।
আমরা পাহাড় বেয়ে যাওয়া শুরু করলাম।
জংগল কেটে এগিয়ে যাওয়া যে কত টা ভয়ংকর সেটা বলে বোঝানো কঠিন। জোকের কামড়ে আমরা
নাজেহাল। এর ওপর পুরো জংগল জুড়ে কাটাওয়ালা লতায় ভর্তি। যেটাই ধরি সেটাই কাটা।
নাহ, এভাবে পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে জংগল
কেটে যাওয়া সম্ভব নয়। অগ্যতা নেমে পড়তে হল পানিতে।
উফ, ভয়ংকর স্রোত। তীর ধরে ধরে অনেক
কষ্টে এগুনো লাগছে সামনে। হঠাৎ ই আমার হাত ফস্কে গেল। পানির তীব্র স্রোত ভাসিয়ে
নিল কিছুটা। গ্রুপের ভাই বন্ধুদের কল্যানে সে যাত্রায় রক্ষে। চোরা পাথরে পা কেটে
আমরা তখন মুমূর্ষু। গলা পানিতে কতক্ষন আর ওভাবে সার্ভাইব করতে পারব তখন ও জানা ছিল
না।
ঘটনা ৮---
প্রায় ২-৩ ঘন্টার অমানুষিক সারভাইব এর
পরে আমরা পৌছালাম লোকালয়ে। অনেক মানুষের ভীড় দেখে ভড়কে গেছিলাম। ওখানে ফায়ার
ব্রিগেড এর কর্মী দেখব, আশা করিনি। তবে তারা কেউই আমাদের নিয়ে চিন্তিত ছিল না। পরে
শুনলাম, আন্দারমানিকের পরে আরো গহীনে কয়েকজন আটকা পড়েছে। তাদের সাথে মেয়ে ও ছিল
২-৩ জন হয়ত। তাদের কে বাচাতেই এত তোড় জোড়।সাংবাদিক দের আসার আগেই আমরা ওখান থেকে
প্রস্থান করলাম।
বিশেষ ধন্যবাদ সূর্য দাস ,Md. Shahidul Islam, Md Mainuddin Leo Nur ভাই
সহ আরো যারা ছিলেন তাদের। আপনাদের সহযোগীতা ছাড়া আমরা কোনভাবেই হয়ত ঐদিন বের হতে
পারতাম না।
Note: We were completely unaware of
the danger in visiting Water Falls in rainy season. Moreover, we were not
prepared as we headed having the preparation of visiting Tanguar Haor. We
learnt, and it will be working for the rest of our life.
বি.দ্র: ঘুরতে গিয়ে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না। উচ্ছিষ্ট
সাথে করে নিয়ে আসুন। পরিবেশ কে সুন্দর রাখুন।আপনারা যেখানেই ঘুড়তে যান দয়া করে পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন৷
Comments
Post a Comment
Please do not enter any spam link in the comment box.