Mayadip Island, Sylhet Tour। মায়াদ্বীপ, পানাম সিটি ও সোনারগাঁও ভ্রমন


#MayadipIsland #sylhet #Sonargaon #PanamCity  #মায়াদ্বীপ  #পানাম সিটি  #সোনারগাঁও
গত মাসে বন্ধু প্লান করেছিলাম যে সিলেট যাবো। তো সেই মোতাবেক বাসের টিকেট কনফার্ম করে ফেলি। কিন্তু ভাগ্য খারাপ ছিলো সেদিন বাসায় এসে শুনি যে সিলেট যাওয়ার পথের ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় সিলেট যেতে প্রায় ১৩/১৪ ঘণ্টা বা আরো বেশি সময় লাগতে পারে। তাই আবার সেই টিকেট ক্যান্সেল করে ফেলি। এই ঘটনায় তো আবার ছোট্ট বন্ধু আনিস খুবই মর্মাহত৷ সে ট্যুর দিবেই প্রতিদিন রাত্রে আড্ডার সময় আমার মাথা চিবায়ে খায়। কিন্তু সময় মিলাইতে পারতেছিলাম না। অবশেষে তারে কথা দিলাম যে কুরবানির আগেই একটা ছোটখাটো ট্যুর দিবো। আর সিলেট ট্যুরটা ঈদের . বা সপ্তাহ পরে দেবো। তো সোনারগাঁও ছোট বেলায় কিন্ডারগার্ডেন এর পিকনিকে বার দুয়েক যাওয়া হইছে কিন্তু পানামে যাওয়া হয় নাই৷ তাই ভাবলাম এটাই হয়ে যাক। প্রান্ত ভাইও সায় দিলো যাইতে।ব্যাস আরকি দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাইতে এটাই কনফার্ম করে ফেললাম। কিন্তু ভাই বিশ্বাস করেন ঘোল খুঁজতে গিয়া একেবারে খাটি দুধ পেয়ে গেছিলাম।
প্লানে ছিলাম মোটে তিনজন যাবো। কিন্তু ঠুস করে আরেক বন্ধু রিফাত রাজি হইয়া গেলো, যারে বলে চমৎকার। তো রিফাত যাওয়ার আগের দিন রাত্রে বলতেছিলো কি একটা দ্বীপ আছে জানি ওইদিকে, সেটায় যাওয়া দরকার। কিন্তু নাম মনে করতে পারতেছিলো না। যাইহোক আমিও বাসায় আইসা আর খোঁজ নেই নাই। তারপর গুলিস্তান থেকে বাসে উঠে জানলাম যে ওই দ্বীপের নাম হলো মায়াদ্বিপ। তারপর সেই বাসে বইসাই মায়াদ্বিপে কিভাবে যাইতে হবে ভাড়া কেমন এই সেই সব কিছু খোঁজ খবর নিয়া ফেললাম।
তো গুলিস্তান থেকে আমরা দোয়েল বাসে করে রওনা দিলাম প্রায় ৪০ মিনিটেই পৌছে গেলাম নারায়নগঞ্জের মোগড়াপাড়া বাসস্টান্ডে। গুলিস্তান স্টেডিয়ামের সামনে থেকে দোয়েল, বোরাক সহ আরো দুই একটা বাস ছাড়ে মোগড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে কিন্তু আমি আপনাদেরকে স্ট্রংলি দোয়েল বাস রিকমেন্ড করছি৷ কারন দোয়েল বাসের ফিজিক্যাল অবস্থা এবং এদের সার্ভিস দুই- ১০/১০ পাওয়ার মত। ভাড়া নন এসি ৪৩ টাকা বোরাকের থেকে কেবল টাকা বেশি৷ এই টাকার হিসাব বুঝলাম না ভাই ৪০ বা ৪৫ রাখতো মিলমতো।এছাড়া বি আর টি সি বা শীতল এর এসি বাসও আছে।ভাড়া ৬৫-৭০ লাগতে পারে।
মোগড়াপাড়া নেমেই পাইলাম বৃষ্টি। মিনিটেই থেমে গেলো।ওইদিন অবশ্য সারাদিনি আকাশ মেঘলা ছিলো হঠাৎ থেমে থেমে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। কিন্তু জোড় বৃষ্টি ছিলোনা। যারে বলে একদম পার্ফেক্ট আবহাওয়া।
তো আমরা প্রথমেই প্লান মাফিক পানামের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। অটো বা সিএনজি আছে যাওয়ার জন্য৷ অটো রিজার্ভ ৮০ টাকার মতো। অনায়াসে জন আরামে যেতে পারবেন। নরমালি জনপ্রতি ১৫ টাকায় যাওয়া যায়।ওইসময় রাস্তা মেরামতের কাজ চলছিলো বলে আমাদের একটু ঘুরে যেতে হইছিলো। তাই ভাড়া কিছুটা বেশি। যাওয়ার রাস্তাটাও আপনার ভালো লাগবে। একেবারে নীরব তার সাথে সবুজ আর পাশে নাম না জানা চমৎকার একটা সরু খাল তো আমরা পৌঁছায়ে ঢুকতে গিয়েই গার্ড ভাই থেকে শুনলাম মন্ত্রি আসছে। দুপুর একটার আগে ঢোকা যাবেনা। গেলো মেজাজ খারাপ হইয়া। যাই হোক এবার তাইলে রওনা দিলাম মায়াদ্বিপের উদ্দেশ্যে।
মায়াদ্বিপে যাওয়ার জন্য আপনাদের আগে যেতে হবে বৈদ্যের বাজারে। সেখান থেকে ট্রলার ভাড়া নিয়ে মায়াদ্বিপ। চাইলে স্পিড বোটেও ঘুরতে পারেন। বৈদ্যের বাজার যাওয়ার জন্য আপনারা মোগড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে জনপ্রতি ১৫ টাকা ভাড়ায় অটো বা সি এনজিতে যেতে পারবেন।আর পানাম থেকে রিজার্ভ অটোতে ৮০-১০০ টাকা নিবে।যদি কেউ বাইক নিয়ে যান তবে বাইক রাখার মতো কিছুটা যায়গা আছে বৈদ্যের বাজার ঘাটে।
বৈদ্যের বাজার ঘাটে আমার আরো দুইটা বন্ধু আসলো বাইকে ওদের বাইক ওখানেই রেখে গেছিলাম। এরপর ট্রলার ভাড়া করলাম ৫০০ টাকা দিয়ে। যদিও ভাড়া ৩৫০ তেও হয়। এটা নির্ভর করে মূলত আবহাওয়া আর ভিড়ের ওপর। সেদিন আবহাওয়া তো ভালো রকমের খারাপ ছিলো। আমরা দোটানায় ছিলাম যে এই অবস্থায় যাওয়া ঠিক হবে কিনা। তারপরে ভোটাভোটি করে যাওয়ার পক্ষেই ভোট বেশি পড়ায় উঠে পরলাম ট্রলারে। এখানে ঘন্টায় ভাড়া হয়। তবে আপনারা কেউ ভুলেও ঘন্টার হিসেবে ভাড়া করবেন না। তাইলে ৩৫-৪০ মিনিটের যাওয়ার পথ তারা ঘন্টার উপরে লাগায় দিবে। এই তথ্য আমরা পরে আমাদের মাঝির কাছ থেকেই পাই। আর স্পিড বোট রিজার্ভ প্রায় ২০০০-২৫০০ চাইতে পারে, কিন্তু আপনারা দামাদামি করে সেটা কমায়ে নিতে পারবেন।আর স্পিড বোট ভ্রমনের থেকে ট্রলারেই মজাটা অনেক অনেক বেশি পাবেন বলে মনে করি।যাই হোক যাত্রা শুরুর সময় আকাশে ঘন কালো মেঘ মোটামুটি ঢেউ থাকলেও তেমন কিছু টেনশন নিলাম না, ভাবছিলাম সারাদিনের মত বেশি গেলে হালকা পাতলা বৃষ্টি হতে পারে এর বেশি কিছুনা। যেহেতু ট্রলারে ছাউনি ছিল তাই বৃষ্টি নিয়ে আর টেনশন করি নাই। ট্রলারে প্রথম ২০ মিনিট আমাদের ভালোই কাটলো মেঘলা আকাশ, হালকা বাতাস, মাঝারি ঢেউ সব মিলায়ে এক্কেবারে পারফেক্ট। কোপায়ে যে যার খুশিমতো নানান পোজে ছবি তুল্লো।কিন্তু ২০ মিনিট পরি শুরু হইলো প্রকৃতির খেলা ঝড়ো বাতাস, বিশাল ঢেউ আর বৃষ্টি, মাঝি ট্রলার কন্ট্রোলই করতে পারতেছিলোনা।ট্রলার বারবার অন্যদিকে ঘুরো যাচ্ছিল। সে এক ভয়ংকর সাথে রোমাঞ্চকর পরিবেশ। সবাই কমবেশি ভয় পাইছিলাম। আসার সময় একি অবস্থা সেই ঝড়। যাইহোক আল্লাহর রহমতে ভালোয় ভালোয় ফিরে আসছি। কিন্তু ভাই মায়াদ্বিপে যাওয়ার পর এই ঝড় ঝামেলা কিছুই আর মাথায় ছিলো না।যায়গাটা এত্তো সুন্দর হবে ভাবতেই পারিনাই। পুরো চারদিকে পানি আর পুরো চরটাই সবুজ সাথে বাতাস। সেই যায়গার সৌন্দর্য বা অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। আর আরেকটা মজার বিষয় ছিলোযে আবহাওয়া খারাপ থাকায় সেখানে আমরা বাদে আর কেউ ছিলোনা ছবি আর ভিডিওতে আপনারা এর সৌন্দর্য সম্পর্কে কিছুটা ধারনা পাবেন। তবে আমি আপনাদের এরকম খারাপ আবহাওয়ায় না যাওয়ার জন্যই আন্তরিক ভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। আশা করি অনুরোধটা রাখবেন। তারপর সেখান থেকে আসি আমরা পানামে সে আরেক মজার অভিজ্ঞতা। এই হালকা বৃষ্টিটাই আমাদের এই ছোট্ট ট্যুরটাকে পূর্নতা দিয়েছে। একবার ভেবেই দেখুন এই মেঘ বৃষ্টির খেলায় আপনি আপনার একদম আপন কিছু মানুষদের নিয়ে ইতিহাসের সাক্ষি হয়ে থাকা শহরের ভেজা সবুজ রাস্তায় হাটছেন অথবা বসে আড্ডা দিচ্ছেন এই অনুভূতি অনন্য। আর আমাদের রিফাত ভাই আবার তার সাক্ষর রেখেই এসেছে পানামে 😂 তার অতি সখের নাইট ভিশন চশমাটি প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে গিয়ে একদম... 🙊 সাথে যদি শিশু বা বয়সে ছোট কেউ থাকে তাইলে সোনারগাঁও ঘুরে আসতে পারেন। বেশ ভালোই সাজানো গোছানো যায়গা। জাদুঘরটাও খারাপ না। গুলিস্তান থেকে যাওয়া আসা একবেলা খাওয়া সহ মোট ৫০০-৬০০ এর ভিতরেই আশা করি আপনার তিন যায়গাই কভার হয়ে যাবে। 

সতর্কতাঃ- অবশ্যই পরিবেশ দূষন করবেন না।যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না। আপনার নিজের স্বার্থেই পরিবেশকে বাঁচান, নিজেও ভালো ভাবে ঘুরুন এবং অন্যকেও ভালোভাবে ঘুরে আসার সুযোগ দিন।

Comments