Bandarban daughter of Mountain Tour । পাহাড়িকন্যা বান্দরবান ভ্রমন




#Bandarban #traveltips
পাহাড়িকন্যা বান্দরবান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা।যার মেঘ ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে আছে সে সহজেই ঘুরে আসতে পারেন। বান্দরবান জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে চট্টগ্রাম বিভাগে অবস্থিত।এটি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অন্তর্গত।চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান জেলার দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। বান্দরবান জেলার আয়তন ৪৪৭৯ বর্গ কিলোমিটার।লোককথা অনুযায়ী,এই অঞ্চলে বানররা একে অপরের হাত ধরে,লম্বা শিকল বানিয়ে নদী পারাপার করতো। বানরের বাঁধ থেকে বান্দরবান শব্দের উৎপত্তি। চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস রেগুলেশন ১৯০০ দ্বারা এই অঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে আরাকান রাজ্যের অংশ থেকে তৎকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আওতায় আসে। এই অঞ্চলের রাজা,তথা সার্কেল চিফ এখনো কর (নামমাত্র) আদায় করেন।প্রতিবছর ঘটা করে দিন ব্যাপী বোমাং রাজ পুণ্যাহ এর মাধ্যমে এই কর আদায় করা হয়। বান্দরবান জেলা এর নৈসর্গিক বৈচিত্র্যের জন্য বাংলাদেশের একটি গুরূত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
২০১৫ তে সর্বপ্রথম এই বান্দরবানেই আমার ট্যুর জীবনের হাতে খড়ি হয়।সেবারি প্রথম পরিবার ছাড়া চট্টগ্রামের বাইরে বের হই।এরপরো বহুবার যাওয়া হয়েছে বান্দরবান।এখানে কেবল মূল বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানগুলোর কথা বলা হলো।যারা দুই দিনে বান্দরবান ঘুরে আসতে চান আশা করি তাঁদের কাজে আসবে।
কি কি দেখবেন?
নীলগিরি: বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৪৭ কিমি দক্ষিণ পূর্বদিকে লামা উপজেলার অংশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট উপরে বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র নীলগিরির অবস্থান।যাকে বাংলাদেশের দার্জিলিং হিসেবে অভিহিত করা যায়।যেখানে পাহাড় আর মেঘের মিতালি চলে দিনরাত।আপনিও ঘুরে আসতে পারেন ওই মেঘের দেশে।তবে যারা মেঘ ভালোবাসেন তারা জুন-জুলাইতে অর্থাৎ বর্ষাকালে ভ্রমণে গেলে বেশি মজা পাবেন।কারণ তখন মেঘের আনাগোনা বেশি।
স্বর্ণমন্দির: বর্তমানে স্বর্ণমন্দির উপাসনালয়টি বান্দরবান জেলার একটি অন্যতম পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিত হচ্ছে।বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এই বৌদ্ধ ধাতু জাদীকে স্বর্ণমন্দির নামকরণ করা হয়।এটি বৌদ্ধ ধর্মাম্বলীদের একটি উল্লেখযোগ্য উপাসনালয় যা বান্দরবান শহর থেকে কিমি উত্তরে বালাঘাট নামক এলাকায় পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত।এটির নির্মাণশৈলী মিয়ানমার,চীন থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ টেম্পলগুলোর আদলে তৈরি করা হয়।
মেঘলা: নাম মেঘলা হলেও মেঘের সাথে মেঘলা পর্যটন স্পটের কোন সর্ম্পক নেই।বান্দরবান জেলা শহরে প্রবেশের কিমি আগে মেঘলা পর্যটন এলাকাটি অবস্থিত।এটি সুন্দর কিছু উঁচু নিচু পাহাড়বেষ্টিত একটি লেককে ঘিরে গড়ে উঠে।ঘন সবুজ গাছ আর লেকের স্বচ্ছ পানি পর্যটককে প্রকৃতির কাছাকাছি টেনে নেয় প্রতিনিয়ত।পানিতে যেমন রয়েছে হাঁসের প্যাডেল বোট, তেমনি ডাঙ্গায় রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা।আর আকাশে ঝুলে আছে রোপওয়ে কার।এখানে সবুজ প্রকৃতি,লেকের স্বচ্ছ পানি আর পাহাড়ের চূড়ায় চড়ে দেখতে পাবেন ঢেউ খেলানো পাহাড়ি বান্দরবানের নয়নাভিরাম দৃশ্য।মেঘলা পর্যটন স্পটের পাশেই রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের বান্দরবান পর্যটন হোটেলটি।
শৈলপ্রপাত: শৈলপ্রপাত বান্দরবান শহর হতে কিমি দক্ষিণ পূর্বে চিম্বুক বা নীলগিরি যাওয়ার পথে দেখা যাবে।এটা মূলত একটা ছোটখাট ঝর্ণা।এর প্রবেশপথে নানাপ্রকার পাহাড়ি আসবাব কিনতে পাওয়া যায়।
নীলাচল:নীলাচল বান্দরবান শহর হতে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে ১৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত একটি পর্বত শীর্ষ।এখানে নীলআকাশ যেন তার নীল আঁচল বিছিয়ে দিয়েছে ভূমির সবুজ জমিনে। যে দিকে দুচোখ যায় অবারিত সবুজ নীল আকাশের হাতছানি। মুগ্ধতায় ভরে উঠে মন প্রাণ।
মিলনছড়ি: মিলনছড়ি বান্দরবান শহর হতে কিমি দক্ষিণ পূর্বে শৈলপ্রপাত বা চিম্বুক যাওয়ার পথে পড়ে।এখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি আছে।পাহাড়ের অতি উচ্চতায় রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পূর্ব প্রান্তে অবারিত সবুজের খেলা এবং সবুজ প্রকৃতির বুক ছিড়ে সর্পিল গতিতে বয়ে সাঙ্গু নামক মোহনীয় নদীটি।
চিম্বুক: চিম্বুক বান্দরবনের অনেক পুরনো পর্যটন স্পট। বান্দরবান শহর হতে ২১ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে মিলনছড়ি এবং শৈল প্রপাত ফেলে চিম্বুক যেতে হয়। এখানে পাহাড়ের চূড়ায় রেস্টুরেন্ট এবং একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে। পাহাড়ের চূড়া থেকে চারদিকের সবুজ প্রকৃতির সৌন্দর্য্য অবগাহন এখানে প্রকৃতিপ্রেমীদের টেনে আনে।

নীল দিগন্ত: নীলগিরি থেকে থেকে কিলোমিটারের দূরত্বে জীবন নগর এলাকায় মনোরম পাহাড়ি পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে "নীল দিগন্ত"।জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে তোলা এই পর্যটন কেন্দ্র থেকে দেশের সর্বোচ্চ পর্বত কেউক্রাডং তাজিংডং রেঞ্জ দেখা যায়।এছাড়া দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ পাহাড় মেঘ-বৃষ্টি-রোদের মিতালিও চোখে পড়বে এখানে।
সাইরু: অবস্থান আর সৌন্দর্যের কথা চিন্তা করলে বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর রিসোর্ট সম্ভবত "সাইরু হিল রিসোর্ট"।বান্দরবান শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ের ঠিক আগে এর অবস্থান।প্রায় ১৮০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় অত্যাধুনিক বিলাশবহুল এই রিসোর্টের সুইমিং পুল বিশেষ ভাবে আকর্ষণ করে।এর সৌন্দর্য পুরোদমে উপভোগের জন্য অবশ্যই রুম নিয়ে এক রাত্রিযাপন করা আবশ্যক।কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্য না থাকায় আমরা কেবল চউমিন খেয়েই আশেপাশে ঘুরে দেখেছি।চউমিন খেয়েছি কারণ ওটাই সবচেয়ে সস্তা ছিলো।২৫০ টাকায়,সাথে কোক ফ্রি।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে বান্দরবান যেতে আপনি / টি রুট ব্যবহার করতে পারেন। ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে প্রথমে চট্টগ্রাম তারপর চট্টগ্রাম থেকে সোজা বান্দরবান। চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান:বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে পূরবী এবং পূর্বাণী নামক দুটি ডাইরেক্ট নন এসি বাস আছে ৩০ মিনিট পর পর বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১১০ টাকা।এছাড়া নতুন ব্রিজের গোড়া থেকে ৯০ টাকায় এস.আলম বাস পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে বান্দরবান:ঢাকা থেকে বান্দরবান পযর্ন্ত ডাইরেক্ট একটি গাড়ি চলে এস.আলম(নন এসি) ভাড়া জনপ্রতি-৬৫০ টাকা।বাস ছাড়ে এস.আলমের কমলাপুর রেল স্টেশনের বিপরীত কাউন্টার থেকে।রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বাস ছাড়ে।
কোথায় খাবেন?
বান্দরবান শহরে খাবার হোটলের মান তেমন ভাল নয়।তবে যে হোটেলে আপনি থাকবেন সে গুলোতে রেস্টুরেন্ট আছে।আমরা খেয়েছিলাম বান্দরবান বাজারের কাছে তাজিংডংহোটেলে। বান্দরবানে সব হোটেলে খাবারের মানের চেয়ে দামটা বেশি। রান্নায় মসল্লা ব্যবহার এবং হলুদের আধিক্য বেশি।সেই তুলনায় এদের সার্ভিস বেশ ভালোই লেগেছে।
কোথায় থাকবেন?
আমরা ছিলাম "হোটেল প্লাজা বান্দরবান"।পরিবেশ হাইজিন বিবেচনায় এটাকেই সবচেয়ে সাশ্রয়ী মনে হয়েছে।এটি বাজারের কাছে অবস্থিত।রুম ভাড়া সিঙ্গেল-৪০০ টাকা,ডাবল- ৮৫০, এসি-১২০০ টাকা। বুকিং ফোন:- ০৩৬১-৬৩২৫২। বান্দরবানে থাকার জন্য হোটেল বুকিং করতে পারেন জোভাগো ডটকম থেকে।
কিভাবে ঘুরবেন?
বান্দরবানে ঘুরার জন্য চাদের গাড়ির চেয়ে বেটার অপশন আর হয় না।সেক্ষেত্রে ১২-১৫ জনের দল থাকলে সবচেয়ে ভালো হয়।চাঁদের গাড়ি ঠিক করার জন্য বাজারে অবস্থিত তাঁদের সমিতি কার্যালয় যেতে হবে।দূরত্বের উপর ভাড়া নির্ভর করে।অতীতে দরদাম করার সুযোগ থাকলেও এখন সমিতি করে ভাড়া নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে।নীলগিরি সহ ৩টা স্পট ভাড়া নিবে হাজার টাকা।
ট্যুর প্ল্যানঃ
১ম দিনঃনীল দিগন্ত-নীলগিরি-চিম্বুক-সাইরু
২য় দিনঃমেঘলা-নীলাচল-স্বর্ণ মন্দির-মিলনছরি-শৈল প্রপাত যা যা মেনে চলবেন:
১।সঙ্গে সবসময় আধা/এক লিটার পানি, সামান্য কিছু হাল্কা খাবার রাখবেন।

২।কোন ছাইয়া পাবলিকদের দলে ভিরাবেন না।মনে রাখবেন, একজন স্বার্থপর টুর মেম্বার আপনার স্বাধের টুরের ১২টা বাজায় ফেলতে পারে।

৩।বান্দরবানের মূল আকর্ষণ মেঘের খেলা।তাই গ্রীষ্মকাল ইগ্নোর করার চেষ্টা করুন।সেরা হয় বর্ষাকালে গেলে।

বি.দ্র: পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন। প্লাস্টিক,পলিথিন বা অপচনশীল বস্তু ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন।

Comments